রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থানসমূহ

রাজশাহী জেলা রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় শহর। পদ্মা নদীর তীরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন শহর হল রাজশাহী। এ রাজশাহী বিভাগে রয়েছে অনেক সুন্দর দর্শনীয় কিছু স্থান। আমরা রাজশাহী শহরকে শান্তির শহর নামে আখ্যায়িত করে থাকি।

দর্শনীয়-পদ্মা-নদী-রাজশাহী

আমাদের এই রাজশাহী জেলাটি আম এবং রেশমি বস্ত্রের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও অনেক দর্শনীয় স্থান আছে যেমন পদ্মার পাড় বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর শিশু পার্ক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পদ্মা গার্ডেন চিড়িয়াখানা পুঠিয়া রাজবাড়ী ইত্যাদি। আজকে আমরা রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করব।

পেজ সূচিপত্রঃ রাজশাহী জেলার ৮টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে যা জানতে পারবো

রাজশাহীর ঐতিহ্য

বাংলাদেশ কয়েকটি বিভাগ নিয়ে গঠিত, তার মধ্যে রাজশাহী বিভাগ অন্যতম। এটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত তাই এই জেলাকে সবাই ইতিহাসখ্যাত জেলা বলে। রাজশাহী শহর হচ্ছে অন্যতম সুন্দর শহর এবং এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে । আর এই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। রাজশাহী শহরের দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ হল এই পদ্মা নদী। পদ্মা নদী রাজশাহীর বিশেষ ঐতিহ্য বহন করে। প্রাচীন জনপথের অংশ রাজশাহীর জনবসতি হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করছে। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় পাল সেন মোগল ইংরেজরা এই অঞ্চলে শাসন প্রতিষ্ঠা করতো। সেইসময়ের রাজারা এ রাজশাহীতে বসবাস করত তাই তারাই এটার নামকরণ করেছে রাজশাহী।
আরো পড়ুনঃ

রাজশাহীর আরেকটি খ্যাতি রয়েছে সেটি হল রাজশাহীকে সবাই শিক্ষানগরী হিসেবে চিনে। কারণ এখানে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেমন-স্কুল, কলেজ, মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,রাজশাহী রেশম গবেষণা কেন্দ্র,পোস্টাল একাডেমী, রাজশাহীবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শারীরিক শিক্ষা কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, নার্সিং ইনস্টিটিউট, হোমিওপ্যাথি কলেজ ইত্যাদি। দেশের একমাত্র পুলিশ একাডেমি ও পোস্টাল একাডেমী রয়েছে এই জেলাতে। এইগুলো রাজশাহীর এক ধরনের ঐতিহ্য বহন করে। 

রাজশাহী শহরের দর্শনীয় স্থান

রাজশাহী শহরের মধ্যে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে যেগুলো অনেকটাই সৌন্দর্য বহন করে। রাজশাহী শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোর বর্ণনা নিম্নে নিম্নে দেওয়া হলো
 
  • টি বাঁধ: রাজশাহী শহরের কেন্দ্র জুড়ে রয়েছে পদ্মা নদী। এই পদ্মা নদীর কয়েকটি অংশ আছে তার মধ্যে একটি হলো টি বাঁধ। প্রচুর দর্শনার্থী এখানে সময় কাটাতে যায়। সামনে নদী আর খোলা হাওয়াতে মানুষ মনোমুগ্ধ হয়। কর্মব্যস্ত মানুষগুলো ছুটির দিনগুলোতে এটি বাদে বেড়াতে আসে পরিবার নিয়ে। টি বাঁধ করার কারণ হলো নদীর পানি যাতে বেশি হলে শহরের মধ্যে পানি না ঢুকে। আর এই বাঁধের আশেপাশে গড়ে উঠেছে খাবার রেস্টুরেন্ট, যেখানে অনেক মানুষজন আসে এবং খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। বর্ষার সময়ে নদীর পানি উপচে ওঠে তাতে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগে।
  • জাতীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা: রাজশাহী শহরের মধ্যে আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল জাতীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। যেখানে ছোট ছোট বাচ্চারা বাবা মার সাথে বেড়াতে যায় সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে অনেক ধরনের পশু পাখি যা বাচ্চারা দেখলে খুব আনন্দ পায়। এছাড়াও রয়েছে খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন রাইডার। রাজশাহী শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ায় রাজশাহীর উদ্যান ও চিড়িয়াখানা অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। এই জাতীয় উদ্যানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ, ফুলের গাছ যা সৌন্দর্যের প্রতীক বাড়িয়ে তোলে। জাতীয় উদ্যানও চিড়িয়াখানায় ছুটির দিনগুলোতে অনেক ভিড় বেড়ে যায় দর্শনার্থীদের। রাজশাহী শহরের মধ্যে জাতীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা একটি জনপ্রিয় দর্শনের স্থান।
  • নভোথিয়েটার: রাজশাহী শহরের মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হল নভোথিয়েটার। বেশ কয়েক বছর হল নভো থিয়েটারটি তৈরি হয়েছে রাজশাহী শহরে। যেখানে দর্শনার্থীর ভিড় অনেক বেশি। নভো থিয়েটারের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানমূলক থ্রিডি ছবি দেখানো হয় যেগুলো বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও নভোথিয়েটারের সৌন্দর্য দেখার মত। নভো থিয়েটারে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইতিহাস তুলে ধরা হয়। নভো থিয়েটার হল দর্শনার্থীদের জন্য সৌন্দর্যের আরেকটি প্রতীক।
  • থিম পার্ক: যুগের সাথে সাথে মানুষ আধুনিক হয়ে গেছে। এইজন্য রাজশাহী শহরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের বাচ্চাদের খেলাধুলার থিম পার্ক। যেখানে বাচ্চারা এসে বিভিন্ন রাইডারের খেলাধুলা করে মনোরঞ্জন করে। রাজশাহী শহরে এরকম তিনটি থিম পার্ক রয়েছে যেমন: রেইনি থিম পার্ক, নেক্সাস পার্ক, জোজো ল্যান্ড ইত্যাদি। শহরের মধ্যে বাসার বাইরে জায়গা না থাকার কারণে বাচ্চাদের খেলার জায়গা পাওয়া যায় না। তাই ছুটির দিনগুলোতে বাবা-মারা বাচ্চাদের নিয়ে আসে এই থিম পার্ক গুলোতে। বিশেষ করে বাচ্চারা খেলাধুলা করে তাদের বিকাশ ঘটাতে পারে এবং আনন্দ পায়। এটিও রাজশাহীর একটি দর্শনীয় জায়গা। 

রাজশাহী জেলার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান 

রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলা সবচেয়ে বড় আয়তনের দিক থেকে। রাজশাহী জেলার মধ্যেও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেটা আমাদের ঐতিহ্য বহন করে। নিম্নের আশায় জেলার জনপ্রিয় কিছু দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা দেওয়া হল
  • শহীদ জিয়ার শিশু পার্কঃ রাজশাহী জেলার মধ্যে অন্যতম বিনোদন শিশু পার্ক হলো শহীদ জিয়া শিশু পার্ক। রাজশাহী নওদাপাড়ায় এই পার্কটি অবস্থিত। এটি রাজশাহীর মানুষের জন্য অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। শহীদ জিয়া শিশু পার্কের ভিতরে সৌন্দর্যের মূল জায়গাটাই হল দিঘির মাঝখানে কৃত্রিম পাহাড়। প্রচুর দর্শনার্থী তাদের অবসর সময়ে এই জিয়া শিশু পার্কে ঘুরতে আসে। জিয়া শিশু পার্কে প্রবেশ মূল্য 25 টাকা।
  • বাঘা মসজিদঃ প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে বাঘা মসজিদ অবস্থিত। রাজশাহী জেলার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এছাড়াও বাঘা মসজিদের ভেতর অনেকগুলো আম বাগান আছে, অনেক লোক এই আমবাগান দেখতেও বাঘা মসজিদে যান। বাঘা মসজিদ পুরাতন ঐতিহ্য বহন করে। এই মসজিদটি ইট দিয়ে তৈরি এবং মসজিদের চারপাশে মাঝখানে দুই সারিতে পাঁচটি করে মোট ১০ টি গম্বুজ আছে। এই মসজিদের পাঁচটি দরজা রয়েছে। বাঘা মসজিদে পূর্ব পাশে রয়েছে বিশাল একটি দিঘী। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে এই বাঘা মসজিদের ছাদ ভেঙ্গে পড়ে। এই মসজিদের বাইরে ও ভিতরে প্রচুর মাটির ফলক রয়েছে।
  • শাহ মখদুম মাজারঃ রাজশাহী শহরে শামগ্ন মাজারটি অবস্থিত। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক স্থান। বিখ্যাত সুফি সাধক হযরত শাহ মুখদুম এর শেষ আবাসস্থল ছিল। তিনি ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। শাহ মখদুমের প্রকৃত নাম ছিল আব্দুল কুদ্দুস। বর্তমানে সামগ্রুম মাজার সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই মাজারের ভেতর রয়েছে একটি সমাধি, একটি মাদ্রাসা এবং একটি বড় মসজিদ। দূর দূরান্ত থেকে অনেক মানুষজন এই  মাজারে আসেন তাদের মনস্কামনা পূর্ণ করার জন্য। এই সামগ্র মাজারটি অনেক সুন্দর শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গড়ে উঠেছে। এই মাজারটি রাজশাহীর সংস্কৃতির ঐতিহ্যের প্রতীক। তাই এটিকে রাজশাহীর মধ্যে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হল বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়। এটি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বৃহৎ। বর্তমানে এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সবুজে ঘেরা বিশাল ক্যাম্পাস এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন। ভ্রমণপিপাসু মানুষজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরতে আসে এবং অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস মতিহার থানায় অবস্থিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হল বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং মর্যাদা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক দিয়েও যেমন ঐতিহ্য বহন করে তেমনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন সুপ্রিয়ভাবে কাজ করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দর্শনীয় স্থান হিসেবে জনপ্রিয় চালিয়েদায় রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক চর্চা করে যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ পিঠা উৎসব, পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে। যেটি আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অন্যরকম ভূমিকা পালন করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভূমিকা অপরিসীম। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ছাত্রছাত্রীরা এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আসে। এটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

দর্শনীয় স্থান পদ্মা গার্ডেন রাজশাহী

রাজশাহী বিভাগে রাজশাহী শহরের মধ্যে আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল পদ্মা গার্ডেন। এই পদ্মা গার্ডেন টি মনোমুগ্ধকর, এই পার্কে একটি মুক্ত মঞ্চে রয়েছে। অনেক ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা পদ্মা গার্ডেনে এসে ভিড় করে। পদ্মা গার্ডেন যেখানে অবস্থিত সেখানে হযরত শাহ মখদুম এর মাজার অবস্থিত, এরপর রয়েছে সীমান্ত নগর যেটা বিজিবি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পদ্মা গার্ডেনে ঘুরতে গিয়ে মানুষ নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করে, এছাড়াও কাশফুলের সৌন্দর্য তো আছেই। পদ্মা গার্ডেনে খেলাধুলা করার জন্য বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইডার রয়েছে। রাজশাহীর পদ্মা গার্ডেন টি অনেক সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে, চারিদিকে সবুজ ছায়ায় ঘেরা হতে প্রচুর দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসে এবং আনন্দিত হয়।
আরো পড়ুনঃ

দৃষ্টিনন্দন রাজশাহী কলেজ

রাজশাহী বিভাগের আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল রাজশাহী কলেজ, যেটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে। প্রতিবছর প্রচুর শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হয়। যেহেতু রাজশাহীকে আমরা শিক্ষানগরী বলি, এই জন্য এই শিক্ষাঙ্গন গুলা অনেক সৌন্দর্য বহন করে পাশাপাশি শিক্ষাও। ১৮৭৩ সালে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় যার সুনাম এখন সারা বাংলাদেশে। রাজশাহী কলেজের ভেতরে প্রবেশ করতেই গারো লাল রংয়ের একটি দালান দেখতে পাওয়া যায় যেটি অনেক পুরনো দিনের ঐতিহ্য বহন করে। এছাড়াও এই কলেজের সৌন্দর্য দেখার মত। অনেক দর্শনার্থী এখানে ছবি তোলার জন্য আসে কারণ রাজশাহী কলেজের সৌন্দর্য দৃষ্টিনন্দন।

রাজশাহী কলেজে প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে আসে। এ ছাড়াও অনেক দূরান্ত থেকে লোকজন ভিড় করে এই সুন্দর রাজশাহী কলেজ দেখার জন্য। রাজশাহী কলেজের ভেতরটা পরিবেশ অনেক সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর। সবুজ মাঠের পাশাপাশি রয়েছে অনেক দৃষ্টিনন্দন ফুলের ফলের গাছ। যেটা রাজশাহী কলেজের শিক্ষাঙ্গনকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্রে রাজশাহী কলেজ অবস্থিত। এই কলেজের আশেপাশে রয়েছে অনেক আবাসিক হল। যেখানে ছাত্রছাত্রীরা থেকে লেখাপড়া করে।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী

রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর অন্যতম। বাংলাদেশের মধ্যে সবার প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় এই বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। বরেন্দ্র জাদুঘর প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের তালিকায় এশিয়ার মধ্যে অন্যতম। সেই সময়কার কয়েকজন জনপ্রিয় মানুষ এখানকার ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করেন এবং গবেষণা করে ৩২ টি দুষ্পাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। 

বরেন্দ্র-জাদুঘর


১৯৪৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বরেন্দ্র জাদুঘরে অর্ধেক অংশ মেডিকেল স্কুল হিসেবে গণ্য করা হতো। তারপর উনিশ তেরো সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর নিজস্ব ভবনে যাত্রা শুরু করে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী এবং অন্যান্য বিশেষ ব্যক্তিবর্গগণ বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর আমাদের একটি সৌন্দর্যের প্রতীক এবং ঐতিহাসিক কিছু নিদর্শন এই বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর।

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রেশন কারখানা রাজশাহী

বাংলাদেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ রেশন কারখানা এই রাজশাহীতে অবস্থিত। যেটা রাজশাহীবাসীদের জন্য অনেক গর্বের ব্যাপার। এর এসব কারখানাটি রাজশাহীর ঐতিহ্য বহন করে। এই রেশন কারখানাটি বালিয়াপুকুরে অবস্থিত। শতাব্দীতে প্রথম চীন দেশে এই রেশম চাষ শুরু হয়, রেশম প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছিল থেকেই। বর্তমানে রেশন কারখানার কদর অনেক বেশি, কারণ রেশন থেকে তৈরি হয় সুন্দরমলায়েম শাড়ি যেটা রাজশাহী সিল্ক নামে পরিচিত। রাজশাহীর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারখানা হল  রেশন কারখানা। ১৯৬২ সালে সরকারি অধ্যায়নে রাজশাহী রেশম ফ্যাক্টরিটি চালু হয়।

রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করা হয় এবং এই শিল্প বৈদেশিক সাহায্য ও কারিগরি সহায়তা লাভ করে। বাঙালি নারীর রেশম শাড়ি ঐতিহ্যগত সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্রের প্রতীক। রেশম কাপড় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ছেলেদের পাঞ্জাবি, বেনারসি, গরদের শাড়ি ইত্যাদি তৈরি করা হয়। ১৯৭৭ সালের রেশম খাতের কার্যক্রম সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে রাজশাহী শহরে একটি ছেরি কালচার বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাই এই রেশন কারখানাকে রাজশাহী জেলার আরেকটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গণ্য হয়।

পুঠিয়া রাজবাড়ী রাজশাহী

রাজশাহী বিভাগের আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল পুঠিয়া রাজবাড়ী। এটি রাজশাহী শহর থেকে 32 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সপ্তদশ শতকের মুঘল আমলে স্থাপিত হয় বাংলার প্রাচীনতম জমিদার বাড়ি। এই পুঠিয়া রাজবাড়ীতে সৌন্দর্যের ছোঁয়া রয়েছে চারিদিকে। এই সুন্দর কারুকার্যে প্রাসাদটি ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী তার শাশুড়ির সম্মানে এই রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন। প্রচুর দর্শনার্থী পুঠিয়া রাজবাড়ীতে ঘুরতে আসে। মাঝে মাঝে এই রাজবাড়িতে মেলা বসে তখন এ রাজ বাড়ির সামনে লোকজনের ভিড় জমে যায়।
পুঠিয়া-রাজবাড়ী


পুঠিয়া রাজবাড়ির চারিপাশে রয়েছে অনেকগুলো রাজ দীঘি। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালেই রয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্যের পোড়ামাটির ফলকের কারু কাজ। এই রাজবাড়ীতে রয়েছে ছয়টি মন্দির এবং মঠ, এছাড়াও রয়েছে ছোট গোবিন্দ মন্দির, পঞ্চরত্ন শিব মন্দির, দোল মঞ্চ মন্দির ইত্যাদি। পুঠিয়া রাজবাড়ীটি আগের সময়ের ঐতিহ্য বহন করে এবং এটি রাজশাহীর একটি ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনীয় স্থান।

রাজশাহী প্রধান দর্শনীয় স্থান পদ্মা নদী

রাজশাহীর মধ্যে সবচেয়ে প্রধান দর্শনীয় স্থান হল এই পদ্মা নদী। রাজশাহী প্রায় অর্ধেক জুড়ে রয়েছে এই নদী। ভারতে এই নদী গঙ্গা নামে পরিচিত, প্রচুর লোকজন তাদের অবসর সময়ে এই পদ্মা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। এই নদীর আশেপাশে দিয়ে গড়ে উঠেছেন অনেক ধরনের রেস্টুরেন্ট, পার্ক এবং দৃষ্টিনন্দন কিছু কারু কাজ। বর্ষাকালে পদ্মা নদীতে প্রচুর পানি জমা হয় এবং তখন পদ্মা নদীর সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। পদ্মা নদীর চর এলাকায় অনেক লোক বসবাস করে, মাঝে মাঝে অনেক লোকজন সেখানে ভ্রমণ করতে যায় নৌকা চড়ে। 

এছাড়াও ছুটির দিনগুলোতে রাজশাহী মানুষের ঘুরে বেড়ানোর প্রধান স্থান হয়ে উঠে এই পদ্মা নদী। পদ্মা নদীর আশেপাশে দিয়ে মাঝে মধ্যেই মেলা বসে, যেখানে প্রচুর দর্শনার্থীরা মেলা দেখতে আসে। এছাড়াও পদ্মা নদীর আশেপাশে কাশ ফুলের সমারহ দেখা যায়। অনেক মানুষ এখানে ছবি তুলতে আসে আবার কেউ কেউ আসে নদীর সুন্দর কোমল হাওয়া খেতে। রাজশাহী শহরের মধ্যে পদ্মা নদীর কয়েকটি ভাগ রয়েছে যেমন টি বাদ, আই বাদ ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ

উপসংহার

এই আর্টিকেলটি মূলত রাজশাহী বিভাগের কিছু দর্শনীয় স্থান নিয়ে লেখা। রাজশাহী বিভাগে অনেকগুলো ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন রয়েছে যা মনোমুগ্ধকর। প্রচুর দর্শনার্থী এই ঐতিহ্যবাহী জায়গা গুলো দর্শন করে দেখেন এবং উপভোগ করেন। আশা করি, রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আমি আপনাদের ধারণা দিতে পেরেছি। তবে আমার মতে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করে কয়েকটি স্থান হল পদ্মা নদী, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর ইত্যাদি। এছাড়াও রাজশাহী শহরের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন লাইটিং তো আছেই যার রাতের বেলা সৌন্দর্য বাড়ায় দেয়।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলি লাইফস্টাইল অ্যান্ড হেলথ্ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url