সাবুদানা একটি খাদ্যের নাম যেটাকে আমরা সাগু নামে বলে থাকি। এটি শিশুদের
জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য এবং এটা বড়দের জন্যও সহজপাচ্য খাবার। বিভিন্ন
খাবার তৈরিতে সাবুদানা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তবে অনেকেরই প্রশ্ন যে সাবুদানা কি গাছে ধরে না এটি কোন মেশিন দিয়ে তৈরি করা হয়
আসলে সাবুদানা পাম গাছ থেকে উৎপাদিত হয়।এছাড়াও সাবুদানায় অনেক
উপকার রয়েছে। নিচে এসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ।
পেজ সুচিপত্রঃ সাবুদানা সম্পর্কে আমরা যা যা জানতে পারবো
সাবুদানা এক প্রকার ট্রাচ জাতীয় পদার্থ এটি পাম গাছ থেকে উৎপাদিত হয় এটি
পান গাছে ভেতরের অংশ থেকে মতো অংশ নিষ্কাশন করা হয়. সাগু প্রচুর পরিমাণে
রান্নার সামগ্রী হিসেবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় পাঠানো হয় এটি পাপুয়া
নিউগিনি ও মালাক্কার নিমনাঞ্চলের মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্য। সাবুদানা দেখতে
অনেকটাই মুক্তার মত সাবুদানা দিয়ে বিভিন্ন রকম ডেজার্ট আইটেম তৈরি করা হয়
সাবুদানা দেখতে ছোট ছোট বলের মতো আকারে ঘন গরম পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট হিসেবে
প্যানকেকের মত করে খাওয়া যায়।
সাবুদানার বৃহত্তম যোগান আসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া ও
মালয়েশিয়া থেকে বেশি আসে। একটি পাম গাছ থেকে প্রায় 800 পাউন্ড
শুকনো স্ট্রাচ পাওয়া যায় এই গাছটি সাধারণত গ্রাম অঞ্চল এলাকায় বেশি দেখা
যায়।সাগু পাম গাছের ফলগুলোকে সম্পূর্ণরূপে পরিপক্ক হতে দেওয়া হয় না কারণ
সম্পূর্ণ ফল পাকা গাছের জীবনচক্র টি সম্পূর্ণ করে এবং বীজ উৎপাদনের জন্য
কান্ডের শহীদ ট্রাচ নিঃশেষিত হয়ে গাছ মরে যায় আর তা থেকে যায় গাছের খালি
ফাঁপা কান্ড প্রায় ১৫ বছর বয়সে গাছগুলোকে ফুল ধরবার সামান্য আগে বা পরে খুব
শীঘ্রই কেটে ফেলা হয়। বেশ কয়েকবার ট্রাচ ধোয়ার পর রান্না করার
জন্য উপযোগী হয়।
সাবুদানা কিভাবে তৈরি হয়
সাবুদানা হলো এক প্রকার কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার। পাম গাছের কান্ডের ভেতরে
নরম স্পঞ্জ এর মত অংশ থেকে নিষ্কাশিত হয়। এটির বৈজ্ঞানিক নাম হল মেট্রো
স্কিলন সাগু । মেট্রো স্কিলন শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে। প্রকৃত পাম
বলতে এই শাবুর গাছ কেই বোঝায় এটি একটি ঔষধি গাছ। লম্বায় ৭ থেকে ১৭ মিটার
পর্যন্ত হয় আবার কখনো কখনো ২৫ মিটার লম্বা হয় এতে একবারেই ফুল ফোটে এবং ফল
ধরার পর গাছ মারা যায়। ছাদ থেকে ১৫ বছর বয়সে এ গাছে ফুল ধরার সময় হয় তারপর
গাছ কেটে এর কান্ডকে চিরে ফেলা হয়।
এরপর কান্ডের নরম অংশ কে ধারালো যন্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আলাদা করা হয়। এরপর
পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর ভেতর থেকে স্ট্রাচ পানির নিচে জমা হয় পানি থেকে আলাদা
করে সাদা রংয়ের টাচ শুকানো হয়। এবং এটা থেকে সাদা গুঁড়ো বের হয়।এরপর
এটিকে বাজারজাত করার জন্য মেশিনের সাহায্যে দানা করে খাওয়ার উপযুক্ত করে তোলা
হয় বাজার থেকে আমরা যে মুক্তোর দানার মতন সাগু কিনে থাকি তার অইলেই থেকে তৈরি
করা হয় সাগু তৈরির এই পদ্ধতিতে বলা হয় জিলেটিনাইজেশন।
সাবুদানা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার। চলুন জেনে নিন আবুদানা খেলে আমাদের
শরীরে কি কি উপকার হয়ে থাকে
শরীরে প্রচুর শক্তি যোগায়ঃ সাবুদানা সাধারণত শর্করা জাতীয় খাদ্য এটিতে
প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে এছাড়াও প্রোটিন ফাইবার ভিটামিন ও খনিজ
লবণ ও সামান্য পরিমাণে থাকে এই কারণে এটি খেলে শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি পাওয়া
যায় এটি মেয়েদের মাসিকের আগে টক দইয়ের সাথে সাবুদানা খেলে শরীরে শক্তি
পাওয়া যায় অনেকে ব্যায়াম করার আগে পরে সাবুদানা খেতে পছন্দ করেন।
এছাড়াও সাবুদানা সহজ পাচ্য খাবার।
সাবুদানা ওজন বাড়াতে সাহায্য করেঃ সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি
থাকে যাদের ওজন কম ওজন বাড়াতে চাচ্ছে তারা এই খাবার প্রচুর পরিমাণে খেতে
পারবে। কম ওজনের শিশুদের জন্য এটি খুব উপকারী খাদ্য শিশুর ওজন বাড়াতে
সাবুদানা ভূমিকা অপরিসীম।
সাবুদানা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও সুন্দর চুল
পেতে সাবুদানার ভূমিকা অপরিসীম। সাবুদানায় থাকা বিশেষ প্রোটিন চুলের জন্য
খুবই উপকারী সাবুদানা খেলে অকালে চুল ঝরে পড়া রোধ করে, নতুন চুল গজাতে
সহযোগিতা করে, খুশকির হাত থেকে রক্ষা করে।
সাবুদানা রক্তচাপ হ্রাস করে ঃ সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম
রয়েছে, এটি রক্তচাপ কমাতে সহযোগিতা করে এর জন্য হৃদরোগ জাতীয় অসুখ কম
হয়।
সাবুদানা ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ সাবুদানাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যানিং
ও ফেভারনয়েড নামে দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের ক্যান্সারের
মতো মরণব্যাধি থেকে রক্ষা করে এটি ফ্রি রেডিকেল গুলো নষ্ট করে দেয়।
সাবুদানা হজম শক্তি বাড়ায়ঃ সাবুদানা একটি সহজ জাত খাদ্য। এটি খেলে আমাদের
হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য সাবুদানাঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য সাবুদানা খুবই
উপকারী ।গর্ভাবস্থায় এটি একটি উত্তম খাবার । এটিতে থাকা ভিটামিন বি সিক্স
এবং ফোলেট ভ্রুনের বিকাশ ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তবে
ডায়াবেটিকস থাকলে গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খাওয়া ঠিক হবে না।
সাবুদানার পায়েস রান্নার নিয়ম
সাবুদানা দিয়ে অনেক রকম ডেজার্ট আইটেম তৈরি করা যায়। এর মধ্যে
সাবুদানার পায়েস খেতে অনেক মজা। চলুন আমরা সাবুদানার পায়েস কিভাবে রান্না
করে তার পুরো পদ্ধতি ও প্রস্তুত প্রণালী জেনে নেই
সাবুদানা ধুয়ে ভালোভাবে পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পানি থেকে
দেড় কাপ পানি সহ সাবুদানা চুলায় জাল দিন। তুলার আর মাঝারি রেখে সাবুদানার
ঘনঘন নেড়ে সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন । সাবুদানা সিদ্ধ হয়ে
যাবার পর এটি দ্বিগুণ হয়ে যাবে তখন নামিয়ে ফেলুন এবং পানি ঝরিয়ে রাখুন।
এরপর আরেকটি আলাদা পাত্রে দুধ জাল দিন দুধের সাথে গুড়া দুধ ও চিনি দিয়ে
ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
এরপর লবণ দিন, দুধ বেশি ঘন হয়ে আসলে এর মধ্যে ক্রিম দিন। হাতের কাছে ক্রিম
না থাকলে চাইলে নাও দিতে পারেন তবে দুধ ঘন করে নিতে হবে। এরপর আগে সিদ্ধ করে
রাখা সাবুদানা ঢেলে ভালো করে নিয়ে নিন পায়েস ভালোভাবে ফুটে উঠলে চুলা বন্ধ
করে দিন । এরপর গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এরপর পায়েশ সার্ভিস ডীশে ঢেলে উপরে
বাদাম কূচী,মোড়োব্বা দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ফ্রিজে রেখে দিন । এরপর সবাইকে
পরিবেশন করুন , ব্যাস তৈরি হয়ে গেল কুখ্যাত মজাদার সাবুদানা
পায়েস।
সাবুদানায় কি কি উপাদান থাকে
সাবুদানায় যেসব উপাদান থাকে সেগুলো শস্যদানার তুলনায় পুষ্টিগুণের
পরিমাণ কম। তবে এটি সবজির সাথে মিশলে এটি অত্যন্ত উপকারী খাবার।১০০ গ্রাম
সাবুদানায় থাকে ৩৩২ ক্যালোরি, ১ গ্রাম প্রোটিন , ১ গ্রাম ফ্যাট, ৮৩
গ্রাম কার্বোহাইড্রেট , ১১% জিংক এবং এক গ্রাম ফাইবার।
সাবুদানার অপকারিতা
সাবুদানা তেমন কোন বিশেষ অপকারিতা নেই এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ওইভাবে
দেখা যায়নি। কিন্তু কাঁচা সাবু খেলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে । তাই কাঁচা
সাবুদানা না খাওয়াই ভালো।এরপর যাদের ওজন অনেক বেশি তারা সাবুদানা খাওয়া
থেকে বিরত থাকবেন। কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরি বেশি থাকায় এটি ওজন বৃদ্ধিতে
ভূমিকা পালন করে। তাই ওজন বাড়াতে না চাইলে এটি কম খাওয়াই ভালো ।
আসল সাবুদানা চেনার উপায়
ইদানিং নকল সাবুদানা বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। নকল সাবুদানা আটা-ময়দা
দিয়ে তৈরি তবে সাবুদানা চেনার কিছু উপায় আছে যেমন
আসল সাবুদানা পানিতে ভেজালে গলে যায় না কিন্তু নকল সাবুদানা পানিতে
ভেজালে গলে যায়
নকল সাবুদানা পানিতে ভেজালে ঘোলাটে হয়ে যায় কিন্তু আসল সাবুদানা পানিতে
দেওয়ার পর পানি স্বচ্ছ ও পরিষ্কার থাকে ।
আশা করি, আমি সাবুদানা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরতে পেরেছি ।বহুল পরিচিত
এই সাবুদানা আমাদের শরীরের উপকার করে। এর খারাপ দিক খুব কম।এই জন্য সাবু খেলে
আমাদের শরীরের অনেক উপকার সাধিত হয়।
সাবুদানার কি গাছ হয়?
সাবুদানা পাম গাছ থেকে উৎপত্তি হয়। এই গাছ একবার ফুল দিয়ে মারা যায়। টি
দেখতে লম্বা এবং শক্ত গাছ এটা সাধারণ ক্রান্তীয় এলাকায় দেখতে পাওয়া
যায়। এই গাছে প্রচুর পরিমাণে স্ট্রাচ জমা হয়। এই স্টাচ থেকে সাবুদানা তৈরি
করা হয়।
সাদা কালার সাবুদানাটি আটা ময়দা দিয়ে তৈরি , আর স্বচ্ছ কালার সাবুদানাটি
অরিজিনাল সাবুদানা।
সাবুদানার দাম কত?
সাবুদানার বিভিন্ন ব্র্যান্ড অনুযায়ী দাম নির্ধারিত হয়। এছাড়াও পণ্যের দাম
, বিক্রে তার ওপর নির্ভর করে। এছাড়া স্থানীয় দোকানগুলোতেও সাবুদানা পাওয়া
যায়।
৫০০ গ্রাম সাবুদানার দাম ১২০ থেকে ২৫০ টাকা হয়ে থাকে।
১কেজি সাবুদানার দাম ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা হয়ে থাকে
২৫০ গ্রাম সাবুদানার দাম প্রায় ১২০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে
তবে এইসব দাম সবগুলোই দোকানদার এবং ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে।
উপসংহার
পরিশেষে বলতে চাই, সাবুদানা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য । সাবুদানার
ভূমিকা অপরিসীম। সাবুদানা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী খাদ্য।
সাবুদানার অপকারের চেয়ে উপকারিতা অনেক বেশি। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায়
সাবুদানা রাখা জরুরী। শিশুদের জন্য এটি খুবই সহজপাচ্য একটি খাবার। আশা
করি সাবুদানা কিভাবে তৈরি হয় এবং এর যাবতীয় তথ্য সমূহ আমি উপরের কথায়
তুলে ধরতে পেরেছি।
ডেইলি লাইফস্টাইল অ্যান্ড হেলথ্ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url