ইউরিন টেস্ট কত প্রকার

আমাদের শরীর বিভিন্ন অঙ্গ দ্বারা গঠিত। শরীরের এই অঙ্গগুলো ভালো আছে কিনা জানার জন্য কিছু পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হল ইউরিন টেস্ট। 

আমরা অনেকেই জানিনা ইউরিন টেস্ট কি ও কত প্রকার ,এটা কেন করতে হই। এছাড়াও ইউরিন এর সাথে কিডনির একটি কানেকশন রয়েছে। চলুন আমরা  ইউরিন এর খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি । 

আরো পড়ুনঃ 

পেজ সুচিপত্রঃ ইউরিন সম্পর্কে বিস্তারিত যা যা জানতে পারবো

ইউরিন টেস্ট  কত প্রকার

ইউরিন টেস্ট কয়েক প্রকার আছে যেমনঃ
  1. ইউরিন আর এম ই
  2. ইউরিন রুটিন
  3. ইউরিন কালচার
  4. ইউরিন গ্লুকোজ টেস্ট
  5. ইউরিন প্রোটিন টেস্ট
ইউরিন-টেস্ট-কত-প্রকার


  • ইউরিন আর এম ইঃএই টেস্ট করলে আমাদের ইউরিন এর সব রকম পরিমাপ জানা যাই। এর মাধ্যমে ইউরিন এর মোটামুটি ধারনা করতে পারি। 
  • ইউরিন রুটিনঃএই টেস্ট সবচেয়ে সাধারন টেস্ট। এটা স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্য করা হই। এর বৈশিষ্ট্য হল, প্রোটিন, গ্লকজ, শ্বেত রক্তকণিকা ইত্যাদি পরিক্ষা করা হয়। 

রুটিন টেস্ট কেন করা হয়?

  1. রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জানার জন্য
  2.  চিকিৎসা নিরক্ষনের জন্য
  3. সাধারণ শারীরিক অবস্থা জানার জন্য

ইউরিন কালচার

এই টেস্ট এর মাধ্যমে প্রস্রাবে কোন ব্যাকটেরিয়া আছে কিনা তা জানা যায়। ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত হলে কোন এন্টিবায়োটিক দিতে হবে সেটা বোঝা যায়।

ইউরিন কালচার কেন করা হয়?

  1. ইউরিনারি ইনফেকশন নির্ণয় করার জন্য
  2. ইউটিআই থেকে বাঁচার জন্য সঠিক এন্টিবায়োটিক নির্বাচনের জন্য
ইউরিন গ্লুকোজ টেস্টঃপ্রস্রাব পরিক্ষার মাধ্যমে গ্লুকোজের মাত্রা মাপা হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের ও কিডনি রোগীদের জন্য এই পরীক্ষাটি মূলত করা হয়।ইউরিন গ্লুকোজ কেন করা হয়?
  1. গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস পরীক্ষার জন্য
  2. কিডনি কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য
  3. ডায়াবেটিস নির্ণয় করার জন্য

ইউরিন প্রোটিন টেস্ট        

এই পরীক্ষার মাধ্যমে ইউরিন এর প্রোটিন আছে কিনা জানা যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রোটিন যাচ্ছে কিনা সেটা জানা যায়।

ইউরিন প্রোটিন টেস্ট কেন করা হয়?

  1. গর্ভাবস্থায় প্রি এক্লামশিয়া জটিলতা নির্ণয় করার জন্য
  2.  কিডনির ক্ষতি হচ্ছে কিনা জানার জন্য
  3. কিডনি রোগ আছে কিনা জানার জন্য

ইউরিন টেস্ট কিভাবে করা হয়

 ইউরিন টেস্ট  সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি । এই টেস্ট করার আগে ডাক্তার আপনাকে পরীক্ষা করার জন্য কিছু খাবার বা পানিও এড়িয়ে চলতে চলতে পারেন, আবার আপনি যদি কোন ওষুধ খেয়ে থাকেন সেটা ডাক্তারকে বলতে হবে আপনাকে ক্লিনক্যাচ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হতে পারে ।এজন্য প্রথমে আপনার যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করে তারপর প্রস্রাবের প্রথম অংশের পরিবর্তে মাঝের অংশ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর একটি পাত্রে প্রস্রাব সংগ্রহ করতে হবে এবং সেটা জমা দিতে হবে পরীক্ষাগারে।

ইউরিন টেস্ট কেন করা হয়

ইউরিন টেস্ট এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করতে পারি। টেস্টের মাধ্যমে আমরা কিডনির যাবতীয় সমস্যা ধরতে পারে এছাড়াও যারা উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারি। ইউরিন পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগ ধরা পড়ে যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ , লিভারের সমস্যা, ইউরিন ইনফেকশন, ক্যান্সার ইত্যাদি। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় ইউরিন টেস্ট করা হয়। যারা কিডনি রোগে ভুগছেন তাদেরও ইউরিন টেস্ট করে কিডনি রোগ শনাক্ত করতে হয় ।

ইউরিন টেস্ট এর ফলাফল

প্রস্রাব রুটিন ফলাফল  একজন রোগীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেয়। যেমন প্রস্রাবের রং, পিএইচ মাত্রা ,প্রোটিন  ,গ্লুকোজ , লোহিত রক্তকণিকা , ব্যাকটেরিয়া শ্বেত রক্তকণিকা ইত্যাদি।

  • পিএইচ মাত্রা 4.5 থেকে 8.0 থাকাটা সাভাবিক। এর থেকে বেশি হলে সমস্যা
  • রং খুব হালকা বা পরিষ্কার হাইড্রেশনে পরামর্শ দিতে পারে আর কারো প্রশ্রাব লিভার রোগের সংকেত দিতে পারে।
  • ব্যাকটেরিয়া প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়া উপস্থিতি থাকলে ইউরিন ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে।
  • প্রোটিন প্রোটিন অল্প পরিমাণে থাকলে সেটা স্বাভাবিক আর বেশি পরিমাণে যদি থাকে তাহলে কিডনি রোগ নির্দেশ করে।
  • লোহিত রক্তকণিকা  প্রসাবে লাল রক্ত গেলে সেটি সংক্রমণের পরামর্শ দেয় যেমন কিডনিতে পাথর নির্দেশ করে।
  • গ্লুকোজ প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতি ডায়াবেটিস নির্দেশ করে।
  • শ্বেত রক্তকণিকা উচ্চমানের শ্বেত রক্তকণিকা প্রস্রাবে সংক্রমণের পরামর্শ দেয়।
ইউরিন টেস্ট করে অনেক রকমের রোগ ধরা পড়ে তার মধ্যে কয়েকটি রোগের নাম নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  1. ইউরিন ইনফেকশন
  2. কিডনিতে পাথর
  3. মূত্রনালীর সংক্রমণ
  4. ডায়াবেটিস
  5. গর্ভাবস্থার অবস্থান

ইউরিন ইনফেকশন 

ইউরিন ইনফেকশন বহুল প্রচলিত একটি রোগ। এই রোগের মূল লক্ষণ হল প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া করা তলপেট ব্যথা করা এছাড়াও নানারকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে তবে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে সঠিক নিয়ম কানুন মেনে চললে সুস্থ হওয়া সম্ভব। ইউরিন ইনফেকশনের কিছু লক্ষণসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো
  1. তলপেট ব্যথা করা
  2. প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা
  3. প্রস্রাবের বেগ বারবার পাওয়া 
  4. প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া
  5. প্রস্রাবের বেগ ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া
মূত্রনালির সংক্রমণ আমাদের  বেশির ভাগ মানুষেরা মুত্রনালির সমস্যাই ভুগে। কারো কারো বেশি সংক্রমণ হয়। মূত্রনালির সংক্রমণের লক্ষন নিচে দেওয়া হল        
  1. জর আসা
  2. কোমরের পিছনে যন্ত্রণা
  3. ক্লান্তি ও বমি বমি লাগা

গর্ভাবস্থার অবস্থান

গর্ভাবস্থায় নারীদের বিভিন্ন সমস্যার কারণে প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয় যার মাধ্যমে আমরা গর্ব অবস্থায় বিভিন্ন সময়ের রুটিন জানতে পারি। শরীরের কন্ডিশন বুঝতে পারি। পরিশেষে বলতে চাই ইউরিন টেস্ট এর মাধ্যমে আমরা অনেক রোগের সন্ধান করতে পারি। ইউরিন কালচারের মাধ্যমে আমি আমরা শরীরের ব্যাকটেরিয়া ধরতে পারি এবং সেই অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে যদি আমরা চিকিৎসা করি তাহলে আমরা তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারব। 

ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তি পেতে আমাদের প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া প্রয়োজন দিনে কমপক্ষে তিন লিটার পানি খাওয়া একটি সুস্থ মানুষের দরকার। এছাড়াও কিডনি রোগ থেকে রক্ষা পেতেও ইউরিন ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতে আমাদের প্রচুর পরিমাণে নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। আসুন আমরা সবাই ইউরিন ইনফেকশন সম্পর্কে সচেতন হই এবং নিয়ম অনুযায়ী সঠিক জীবন যাপন করি।

উপসংহার

বর্তমান যুগে ইউরিন ইনফেকশনের প্রবলেম ঘরে ঘরে। তাই ইউরিন ইনফেকশন বা ইউরিনের কোনোরকম প্রবলেম যাতে না হয় সেদিকে সচেতন হওয়া জরুরী। আপনাদেরকে জানানোর জন্য ইউরিন সম্পর্কে কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে উপরে আলোচনা করলাম। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলি লাইফস্টাইল অ্যান্ড হেলথ্ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url