তেলাকুচা পাতার ঔষধি গুন
তেলাকুচা একটি লতানো উদ্ভিদ। এটি দেখতে গারো সবুজ রঙের পাতা
হয়। তেলাকুচা সাধারনত রাস্তার আশেপাশে বন জঙ্গলে বংশবিস্তার করে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে তেলাকুচার চাষ করা হয়। তেলাকুচা গাছে
প্রচুর ঔষধি গুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
তেলাকুচার ফল ও কচি ডগা অনেক জায়গায় খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে। তেলাপোছা এক
প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম কোকিনিয়া। তেলাকুচার অনেক ঔষধিগুণ
রয়েছে। আজকে আমরা তেলাকুচার ঔষধি গুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পেজ সূচিপত্রঃতেলাকুচা পাতার ঔষধি গুন এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে যা যা জানবো
তেলাকুচা গাছের শিকড় খেলে কি হয়?
তেলাকুচা সাধারণত ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তার কিছু অংশ বিষাক্ত হতে পারে।
এই গাছের পাতার অনেক উপকারিতা থাকলেও এর শিকড়ের তেমন কোন বিশেষ উপকারিতা
নেই।তেলাকুচা গাছের শিকড়ে রয়েছে প্রচুর ছোলা নিন নামক বিষাক্ত রাসায়নিক যা
মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর, এটি খেলে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে অথবা পেটের সমস্যা, বমি
বমি ভাব, মাথা ব্যথা এমনকি শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এই গাছের শিকড় সাধারণত খাওয়া
যায় না তবে এই শিকড় বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ব্যবহার করা হয়। গাছের শিকড় কিডনি
ও লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
তেলাকুচা গাছের শিকড় খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে তবে সেটি
নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে খেতে হবে, মাত্রা না জেনে খাওয়া ঠিক হবে না তাতে বিপদ
আরো বাড়বে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানি সমস্যার সমাধানের
সাহায্য করে এই গাছের কাঠ। এই গাছের শিকড় হজম স্বাস্থ্য বাড়াতে সাহায্য
করে।তেলাকুচা গাছের শিকড় সাবধানতা অবলম্বন করেই খাওয়া উচিত, কারণ এই
শিকড়ের তেমন কোন বিশেষ স্বাস্থ্য উপকারিতা নেই। তাই এটা ব্যবহারের আগে এর
সম্পর্কে জেনে খাওয়া বা ব্যবহার করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ
তেলাকুচা পাতার অপকারিতা কি
তেলাকুচা পাতার তেমন কোন অপকারিতা নেই। তবে এই পাতার উপকারিতায়
বেশি। তবে এই পাতা মাত্রাতিরিক্ত খেলে শরীরের অনেক সমস্যা তৈরি হতে পারে এবং
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এই পাতা অতিরিক্ত সেবনের ফলে কিডনি ও
লিভারের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও এটি অতিরিক্ত সেবনের ফলে পেটে সমস্যা,
নিম্ন রক্তচাপ, বমি বমি ভাব, গর্ভাবস্থায়ও সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই
পাতা খাওয়ার আগে সঠিক মাত্রা জেনে পাতাটি খাওয়া উচিত। না জেনে বেশি পাতা খেয়ে
ফেললে শরীরের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, তাই এই বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া
জরুরী। এই পাতা খেতে চাইলে প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপরই খাবেন। যাদের
এই পাতা খেলে সমস্যা হয় তারা এ পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
তেলাকুচা পাতার উপকারিতা
তেলাকুচা পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক
গুরুত্বপূর্ণ। চলুন নিম্নে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানি-
- তেলাকুচা পাতা কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না
- গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের মত সমস্যাকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
- হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে
- জন্ডিস খুবই জটিল রোগ এই রোগ সারাতে পাতার রস করে খেলে জন্ডিস কমে আসে
- পানির সাথে চুন ও তেলাকুচা ভিজিয়ে হাতে-পায়ে ঘষে নিলে হাত পায়ের জ্বালাপোড়া বন্ধ হয়ে যায়
- তেলাকুচার পাতা ভাজি করে রান্না করে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটির শাক খুবই উপকারী
- অনেকেরই শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে, তেলাকুচার পাতার রস খেলে শ্বাসকষ্ট অনেকটাই কমানো সম্ভব
- মুখের ব্রণ কমাতে এই পাতা মুখে লাগালে ব্রণ ভালো হয়ে যায়
- তেলাকুচার পাতা রস করে তার সাথে সামান্য হলুদ ও মধু মিশিয়ে প্রতিদিন রাতে খেলে অ্যালার্জি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়
গর্ভাবস্থায় তেলাকুচা পাতা কি উপকারি?
গর্ভাবস্থায় তেলাকুচা পাতার কোন বিশেষ রকমের উপকারিতা নেই, তবে
গর্ভাবস্থায় এই পাতাটি খাওয়া যাবে তবে সেটি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী। বিজ্ঞানী গবেষণায় গর্ভাবস্থায় এই পাতার উপকারিতা সম্পর্কে কোন
বিশেষ ধারণা পাওয়া যায়নি।তেলাকুচা পাতা কিছু সম্ভাব্য পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেটার কারণে গর্ভাবস্থায় এটি কম খাওয়াই ভালো।
গর্ভাবস্থায় এই পাতাটি খেলে অনেক সময় গর্ভপাত হতে পারে, তাই এই পাতাটি না
খাওয়াই উত্তম। কারণ এই পাতাতে রয়েছে বিভিন্ন রকম ঔষধি গুণ।
তাই এই পাতাতে কি পরিমাণ মাত্রা থাকে সেটি না জেনেই গর্ভাবস্থায় এই পাতাটি
খাওয়া উচিত না। আমার মতে গর্ভাবস্থায় তেলাকুচার পাতা না খাওয়াই
উত্তম।
তেলাকুচা পাতার ঔষধি গুনাগুন
তেলাকুচা পাতার অনেকগুলো ঔষধি গুনাগুন রয়েছে নিম্নে সেগুলো বর্ণনা করা
হলো-
- কাশিঃ কাশি বুকে জমে গেলে এই কাশি তরল করার জন্য তিন থেকে চার চা চামচ তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে এর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে কাশি ভালো হয়ে যাবে।
- ফোড়া ও ব্রণঃ ফোড়া ও ব্রণ হলে তেলাকুচা পাতার রস বা পাতা থেঁতলো করে ফোড়া ও ব্রণে প্রতিদিন সকাল বিকাল ব্যবহার করতে হবে।
- আমাশয় হলেঃ আমার সয় হলে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস তিন থেকে চার চা চামচ প্রতিদিন সকালে ও বিকালে খেলে তিন দিনের মধ্যেই আমাশয় অনেকটাই ভালো হয়।
- শ্বাসকষ্টঃ কারো যদি শ্বাসকষ্ট থাকে বা বুকে সর্দি কাশি জমে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট হয় তবে এই পাতার মূল ও রস হালকা গরম করে তিন থেকে চার চা চামচ পরিমাণ সকাল বিকালে খেতে হবে।
- স্তনে দুধ না আসলেঃ অনেক গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চা হবার পর বাচ্চারা বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে পায় না, তখন এই অবস্থায় তেলাকুচার ফলের রস একটু গরম করে ছেঁকে নিয়ে এক চামচ রসের সাথে মধু মিশিয়ে সকালে ও বিকালে দুইবার খেলে স্তনে দুধ আসবে ইনশা আল্লাহ।
- মুখেরুচি না থাকলেঃ অনেক সময় অনেক মানুষের খাওয়ার ইচ্ছাটা হারিয়ে যায় এবং কোন কিছুই মুখের স্বাদ পায় না সে ক্ষেত্রে তেলাকুচার পাতা পানিতে একটু সিদ্ধ করে পানিটা ফেলে দিয়ে ঘি দিয়ে শাকের মতো রান্না করে খেলে মুখের অরুচি দূর হয়ে যায়, এই শাক খেলে পেটের সমস্যা বদহজমের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যঃ যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তাদের জন্য তেলাকুচার পাতা কান্ড সহ পাতা ছেচে রস প্রতিদিন সকাল ও বিকালে আধা কাপ করে খেলে উপকার পাওয়া যায়, এছাড়াও এর পাতা শাক রান্না করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- জ্বর আসলেঃ জ্বর আসলে তেলাকুচার মূল ও পাতা একসাথে রস করে হালকা গরম করে সকাল বিকাল খেলে জ্বর অনেকটাই সেরে যায়।
- পা ফুলে গেলেঃ পা ফুলে গেলে এই পাতার রস খেলে পা ফোলা অনেকটাই সেরে যাবে।
চুলের যত্নে তেলাকুচার ব্যবহার
তেলাকুচা পাতার যেমন ঔষধি গুণ রয়েছে, তেমনি এটি মানুষের চুলের যত্নেও
ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেকেই চুলের যত্নের জন্য এটির ব্যবহার জানতে চান। চুলের
যত্নে তেলাকুচার পাতার ভূমিকা অপরিসীম। এই পাতার রস চুলে ব্যবহার করলে চুলের
সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, কারণ তেলাকুচার পাতায় রয়েছে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান
যা চুলের পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। ঘরোয়া উপায়ে এই পাতা ।দিয়ে চুলের যত্ন
করা সম্ভব। এছাড়াও তেলাকুচার পাতা খুশকি ও চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। আবার
আপনি চাইলে এই পাতা নারিকেল তেলের সাথে জাল দিয়ে ছেঁকে সংগ্রহ করে রেখে এই তেল
মাথায় ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে
সাহায্য করে।
তেলাকুচার পাতা বেটে প্যাক বানিয়ে মাথায় লাগালে খুশকি থাকে না, এছাড়াও এই
পাতার রস শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে মাথা ত্বক পরিষ্কার
থাকে এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়। যারা চুলের যত্নে এই পাতার ভূমিকা জানেন না
আশা করি তাদেরকে কিছুটা হলেও এর উপকার জানাতে পেরেছি। তবে এই পাতা ব্যবহার করার
আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে মাথা তোকে কোনরকম এলার্জি বা অস্বস্তি হচ্ছে
কিনা যদি হয়ে থাকে তাহলে এটির ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে। তেলাকচার পাতা
ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
তেলাকুচা ডায়াবেটিস সহ অনেক রোগের মহা ঔষধ
তেলাকুচার পাতা ডায়াবেটিস সহ নানান রোগের মহা ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এর পাতা এবং ফল ঐতিহ্যবাহী ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় দেশে-বিদেশে। এর ফল এবং
পাতার রস এজমা, ব্রংকাইটিস, এলার্জি, জ্বর এবং জন্ডিস রোগের মহা ঔষধ হিসেবে
ব্যবহৃত হয়। তবে এই পাতার ব্যবহার শুধুমাত্র আঞ্চলিক কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে
এটা পরীক্ষিত নয়। তেলাকুচার পাতা খাবার হিসেবেও অনেক জনপ্রিয়। এর পাতা ও ফল
খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।থাইল্যান্ড এ বিভিন্ন তরকারি এবং সুপে ফল ব্যবহার করা
হয়।কিছু কিছু জায়গায় এটি চাষ করা হয়।তেলাকুচা বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে বেশি
দেখা যায়, এটি পাতা শাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পুরান ঢাকার সূত্রা বাজারে এই
শাক কিনতে পাওয়া যায়। এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বি টাকা রুটিন, ভিটামিন
সি ও ভিটামিন এ।
তেলাকুচা ফল কি খাওয়া যায়?
অনেকেই মনে করেন,তেলাকুচার ফল খাওয়া যায় না। তবে আপনি শুনলে আশ্চর্য
হবেন, বিভিন্ন দেশে এই ফল প্রচুর হারে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিদেশীরা এই ফল
রান্নার কাজে ব্যবহার করে। আমাদের বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষ তেলাকুচার ফল
ব্যবহার করে বিভিন্ন রান্নাতে। এটার কাঁচা ফল দেখতে অনেকটা পটলের মতো এটি পটলের
মতন করে কেটে তরকারি হিসেবে রান্না করা যায়। এছাড়াও এর পাতাও শাক হিসেবে
খাওয়া যায়।তেলাকুচার ফল খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
আনতে সাহায্য করে। তাই যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের তেলাকুচার ফল খাওয়া
উচিত। আমাদের অনেকেরই ধারণা তেলাকচার ফল খেলে মানুষ পাগল হয়ে যায় কিন্তু আসলে
এই কথার কোন সত্যতা নেই। আর এই বিষয়ে কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য নেই, আসলে এই ফলটি
খাওয়া এবং রান্নার উপযোগী।
তেলাকুচা পাতার পুষ্টিগুন
তেলাকুচা পাতার পুষ্টিগুণ অনেক। এটি এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ, কুনরি শাক নামেও
এটি বিভিন্ন জায়গায় পরিচিত। এই পাতার পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না, কিন্তু
এটি বনে জঙ্গলে, রাস্তার আশেপাশে এটি হয়ে থাকে। তেলাকুচাপাতার অনেক রকম ঔষধি
পুষ্টিগুণ রয়েছে, এই গাছটি দেখতে সবুজ রংয়ের পাতা এবং ফল সবুজ রঙের কিন্তু
পাকলে এটি লাল বর্ণ ধারণ করে। চলুন এই পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জান।১০০ গ্রাম তেলাকুচায় পুষ্টিগুণ রয়েছে,১.৬ গ্রাম আশ,১.৪ মিলিগ্রাম আয়রন,
৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,১.২ গ্রাম প্রোটিন। এছাড়াও এই পাতায় রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে মিনারেল ও বিটা ক্যারোটিন।
উপসংহার
তেলাকুচা পাতার ঔষধি গুন বলে শেষ করা যাবে না। তেলাকুচা পাতার অপকারিতা থেকে
উপকারিতা অনেক বেশি। আজকের এই আর্টিকেলে তেলাকুচা পাতার ঔষধি গুনাগুন,
পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আশা করি ধারণা দিতে পেরেছি। তবে তেলাকুচার যেসব অপকারিতা
রয়েছে তার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তারপর খাওয়া উচিত। আমার মতে, খাওয়ার
পূর্বে একজন ডাক্তারের পরামর্শ না প্রয়োজন। আমি চাই আপনারা আমার এই আর্টিকেল
পড়ে উপকৃত হবেন এবং অনেক কিছু জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
ডেইলি লাইফস্টাইল অ্যান্ড হেলথ্ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url