কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁঠাল হলো একটি ফল। আমাদের দেশের জাতীয় ফলের নাম হচ্ছে কাঠাল। কাঁঠাল খেতে অনেক সুস্বাদু। কাঁচা কাঁঠাল রান্নার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। এই ফলের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।
আজকে আমরা কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। কাঁঠালের
অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা ও রয়েছে যা জানলে আপনি অবাক হবেন। চলুন নিম্নে
বিস্তারিত জানা যাক
পেজ সূচিপত্রঃ কাঁঠালের কয়েকটি কার্যকরী টিপস সম্পর্কে যা জানবো
- কাঁঠালের ইতিহাস
- কাঁঠালের পুষ্টিমান
- কাঁঠালের দশটি স্বাস্থ্য উপকারিতা
- কাঁঠালকে জাতীয় ফল বলা হয় কেন?
- কাঁঠালের অপকারিতা
- কাঁঠালের বিচির উপকারিতা
- কাঁঠালের পাতার উপকারিতা
- কাঁঠালের প্রকারভেদ
- রান্নায় কাঁঠালের ব্যবহার
- উপসংহার
কাঁঠালের ইতিহাস
কাঁঠাল দেখতে হলুদ বর্ণের, কাঁঠাল মূলত গ্রীষ্মকালীন ফল। কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক
নাম মুরাসিয়া, কাঁঠাল মূলত ক্রান্তীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হয়। এটি ফলের
মধ্যে সবচেয়ে বড় ফল হিসেবে বিবেচিত। এটি বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসেবে
সরকারিভাবে নির্ধারিত। কাঁঠাল কাঁচা পাকা উভয় ভাবেই খাওয়া যায়। এই কাঁঠাল
সাধারণত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় রান্নার কাজে ব্যবহার হয়। কাঁঠাল ফলের অনেক
উপকারিতা বিদ্যমান। এই ফল খেতে খুবই সুমিষ্ট। বিশেষ করে নিম্নভূমিতে কাঁঠালের চাষ
বেশি হয়। কাঁঠাল একটি সহজলভ্য ফল বছরে একবারই হয়। কাঁচা কাঁঠালকে
এঁচোড় বলা হয় আমাদের বাংলাদেশে।
কাঁঠাল ফলের যেমন উপকার রয়েছে তেমনি কাঁঠালের গাছের উপকারিতা কম নয়। কাঁঠাল গাছ
দিয়ে কাঠ বানানো হয় এবং এই কার্ড দিয়ে সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র তৈরি হয়। আবার
কাঁঠাল পাতার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে এবং এটি পশু প্রাণীদের প্রিয় খাদ্য।
কাঁঠালের বিচি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের রান্নার পদ তৈরি করা হয়, যেগুলো খেতে খুবই
সুস্বাদু। অনেক জায়গায় কাঁচা কাঁঠাল মাংসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার
করা হয়, কারণ এটি দেখতে অনেকটাই মাংসর মতন। কাঁঠাল শব্দটি এসেছে পর্তুগিজ থেকে।
এছাড়াও ওয়েস্ট ইন্ডিয়ার জামাইকাতে কাঁঠাল চাষ হয় এবং বাংলাদেশের
ভাওয়ালের গড় ও মধুপুরে কাঁঠালের চাষ অনেক বেশি হয়।
আরো পড়ুনঃ
কাঁঠালের পুষ্টিমান
কাঁঠালের পুষ্টিমান বলে শেষ করা যাবে না। কাঁঠাল নিজের গুনেই গুনান্বিত। কাঁচা ও
পাকা কাঁঠালের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। চলুন কাঁঠালের পুষ্টিমান সম্পর্কে ধারণা
নেই
উপাদানঃ প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে প্রোটিন ১.৭২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম,
পটাশিয়াম ৪৪৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৯ মিলিগ্রাম, শক্তি ৩৯৭ ক্যালরি, চিনি
১৯.০৮ গ্রাম, ভিটা ক্যারোটিন ৬১ মাইক্রগ্রাম, প্যান্টোথেণিক এসিড ০.২৩৫
মিলিগ্রাম, লুটিন জিয়াস কানথিন ১৫৭ মাইক্রগ্রাম, ভিটামিন সি ১৩.৮
মিলিগ্রাম, 0.২৩ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, জিংক ০.১৩ মিলিগ্রাম,
প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড ০.২৩৫ মিলিগ্রাম, ফলেট ২৪ মাইক্রগ্রাম, ০.৯২ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম, ভিটা ক্যারোটিন৬১ মাইক্রগ্রাম, রিবোক্লাবিন ০.৫৫
মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৫ মাইক্রগ্রাম, ম্যাঙ্গানির ০.০৪ ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি
সিক্স ০.৩২৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি নাইন চব্বিশ মাইক্রগ্রাম, ভিটামিন ই ০.৩৪
মিলিগ্রাম ভিটামিন ই ০.৩৪ মিলিগ্রাম ও অন্যান্য।
কাঁঠালের দশটি স্বাস্থ্য উপকারিতা
কাঁঠালের যতগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তা জানলে আপনি অবাক হবেন। কাঁঠালের
পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক, এই আর্টিকেলটিতে কাঁঠালের ১০ টি আশ্চর্যজনক
স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো-
- হজমে সহায়তা করেঃ কাঁঠালের প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় এটি হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। যেসব মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্য রোগী ভোগেন তাদের জন্য কাঁঠাল একটি আদর্শ খাবার। কাঁঠাল কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কাঁঠালের ভূমিকা অপরিসীম।
- ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ কাঁঠাল এমন একটি আশ্চর্যজনক ফল যেটি ওজোন কমানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে। যদি কোন ব্যক্তি ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত কাঁঠাল খেলে এটি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে কারণ কাঁঠালের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উচ্চ ফাইবার যে কারণে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। হলে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে আমরা বিরত থাকতে পারি।
- রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়ঃ যেসব রোগী ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তাদের জন্য কাঁঠাল একটু উপকারী ফল হতে পারে, কারণ কাঁঠালের রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে না ফাইবারের উপাদান থাকায় রক্তে চিনির শোষণকে ধির করতে সাহায্য করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ কাঁঠালের আরেকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা হলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। কারণ এটি শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কাঁঠালে এমন একটি যৌগিক পদার্থ রয়েছে যা খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়াতে হেল্প করে।
- হাড় মজবুত করেঃ কাঁঠাল খেলে আরো একটু উপকার পাওয়া যায় সেটি হল এটি হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে, কারণ কাঁঠালের রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম এর মত উপাদান। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কাঁঠাল রাখলে আমাদের শরীরে হাড় গঠন ও শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করবে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কাঁঠালের প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁঠালে ভিটামিন সি থাকায় শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে বলে জানা যায়, যা সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয়।
- দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এর উপস্থিতিতে চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অবদান রাখে, ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং কর্নিয়ার স্বাস্থ্য বজায় রাখে। এজন্য আমাদের কাঁঠাল খাওয়া প্রত্যেকের প্রয়োজন।
- শক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ কাঁঠালে আরেকটি আশ্চর্যজনক উপকারিতা হলো এটি শর্করার একটি প্রাকৃতিক উৎস যার মধ্যে রয়েছে সুক্রোজ। যা আমাদের শরীরে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখেঃ কাঁঠাল ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে কারণ কাঁঠালের ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। ভিটামিন সি কলা যেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে যা ত্বককে স্থিতিস্থাপকতা এবং দৃঢ়তা বজায় রাখার জন্য সাহায্য করে।
- বাচ্চার খাদ্য হিসেবেঃ কাঁঠাল বাচ্চার খাবার হিসেবে খুবই উপযোগী। ৬ মাস বয়সের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি কাঁঠালের রস খাওয়ালে বাচ্চাও উপকার পাবে। এটি বাচ্চার ক্ষুধা নিরাময় করে। আবার যদি দুগ্ধ দানকারী মা প্রতিদিন কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
কাঁঠালকে জাতীয় ফল বলা হয় কেন?
কাঁঠালকে বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসেবে বলার কারণ হলো এটি বাংলাদেশের অনেক
জনপ্রিয় এবং প্রধান ফলের মধ্যে পড়ে। এখন পর্যন্ত কাঁঠালি জাতীয় ফল হিসেবে
সরকারিভাবে ঘোষণা করা আছে। কাঁঠাল বাংলাদেশের জনগণের জনপ্রিয় ফলের মধ্যে একটি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক
দৃষ্টিকোণ থেকেও কাঁঠাল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। এছাড়াও কাঁঠাল চাষ
খুবই সহজ এবং লাভজনক। বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল চাষ হয়। বাংলাদেশ
স্বাধীন হবার পর আমকে জাতীয় ফল করার কথা ভাবা হয়েছিল কিন্তু ভারত আগে থেকেই
আমকে জাতীয় ফল হিসেবে বাছাই করে নিয়েছিল এজন্য কাঁঠালকে বাংলাদেশের জাতীয় ফল
হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
কাঁঠালের অপকারিতা
কাঁঠালের যেমন অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে,
এগুলো বিষয়ে আমাদের মাথায় রাখা প্রয়োজন। আঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকায়
কাঠাল একটি গ্রুপ পাক খাবার। আর আমিষের পরিমাণ বেশি থাকায় কাঁঠাল হজম হতে সময়
বেশি নাই অধিক পরিমাণে কাঁঠাল খেলে বদ হজম হতে পারে। এছাড়াও ডায়াবেটিস
আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কাঁঠাল খাওয়ার ব্যাপারে একটু সতর্ক হতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কাঁঠাল খাওয়া ভালো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।
এছাড়াও যাদের ওজন বাড়ার ভয় আছে তারা কাঁঠাল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খাওয়া যেতে পারে তবে খুব বেশি না। এই সময় কাঁঠাল অতিরিক্ত
খেলে জটিলতা বাড়তে পারে, এমনকি ব্রেস্ট ফিডিং পড়ার সময়ও কাঁঠাল অতিরিক্ত
খাওয়া যাবে না একজন সুস্থ ব্যক্তি দিনে তিন কোয়া কাঁঠাল খাওয়া স্বাভাবিক, তবে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া দরকার।
যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের কাঁথার অতিরিক্ত খেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে,
কারণ কাঁঠালে রয়েছে অতিরিক্ত ক্যালরি ও গ্লুকোজ। এটি শরীরে প্রাকৃতিক চিনি
ইন্সুলিনের প্রতিক্রিয়া বাড়ায়।
কাঁঠাল খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। যারা অতিরিক্ত কাঁঠাল খান তারা গ্যাসের
মতন খারাপ সমস্যায় ভুগেন। তাই যারা গ্যাসের সমস্যায় ভুগেন তাদের কাঁঠাল খাওয়া
থেকে বিরত থাকাই ভালো। আবার অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে শরীরে গরম অনুভুতি হয়
যেটা খুবই কষ্টদায়ক। আবার অনেক সময় খালি পেটে কাঁঠাল খেলেও পেটে গ্যাসের
সৃষ্টি হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তারা কাঁঠাল খাওয়ার আগে নিয়মিত
প্রেসার মেপে তারপর পরিমিত কাঁঠাল খান এবং সুস্থ থাকুন।
আরো পড়ুনঃ
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল হলেও, আমাদের দেশের মানুষ এই ফল সহজলভ্য হয় কি গুরুত্ব
দেয় না। কিন্তু কাঁঠালের বিচি বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করে। এখন চলছে
পাকা কাঁঠালের মৌসুম। মানুষ কাঁঠাল না খেলেও এর বিচি সংগ্রহ করে রাখে
এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করে। এটি কখনো কখনো বাজারেও অল্প দামে কিনতে পাওয়া
যায়। বিভিন্নভাবে কাঁঠালের বিচি রান্না করে খায়। শরীর সুস্থ রাখতে কাঁঠালের
বিচির জুড়ি নেই, এছাড়াও ডায়েটে কাঁঠালের বিচি খেলে উপকার পাওয়া
যায়। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রিভফ্লাভিন ও থায়ামিন এগুলো
সবই ভিটামিন বি এর মধ্যে পড়ে।
কাঁঠাল শরীরে শক্তি সঞ্চয় করে, নার্ভ সিস্টেম, হৃদযন্ত্র এবং মাংসপেশীর
রক্ষণাবেক্ষণ করে। কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি সহজে শরীরে
হজম হয় না কিন্তু এটি পেটের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হিসেবে কাজ করে।
কাঁঠালের বিচি শরীরে শর্করার মাত্রা কমায় এবং ইনসুলিন সেনসিটিভির উন্নতি ঘটায়।
যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কাঁঠালের গুড়া খুবই উপকারী। কাঁঠালের
বিচি মস্তিষ্ক ও হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে কারণ কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে আয়রনের মাত্রা, যেটা আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য
করবে।
রূপচর্চায় কাঁঠালের বিচির ভূমিকা অপরিসীম। ত্বকের যত্নে কাঁঠালের বিচির বুড়া
দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে ফেসপ্যাক তৈরি করে সপ্তাহে দুই দিন মুখে লাগালে
ত্বকের উজ্জ্বল ফিরে এবং বয়সের ছাপ দূর হয়। এছাড়াও এতে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায়
মৃত কোষ দূর করে ত্বকের এবং সতেজতা বাড়ায়। চুলের যত্নেও কাঁঠালের ভূমিকা
অপরিসীম। চুলের আগা ফেটে গেলে কাঁঠালের বিচি নিয়মিত খেলে চুল ঝরা রোধ করে এবং
চুলের আগা ফাটাও রোধ করে। নিয়মিত কাঁঠালের বীজ খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে
দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তাই নিয়মিত কাঁঠালের বিচি খাওয়া আমাদের প্রয়োজন।
কাঁঠালের পাতার উপকারিতা
কাঁঠাল যেমন আমাদের দেশে উপকারী ফল তেমনি অন্যান্য দেশেও এর কদর অনেক বেশি। তবে
কাঁঠাল গাছ থেকে শুরু করে কাঁঠালের পাতা পর্যন্ত সবকিছুই আমাদের উপকারে আসে।
তৃণভোজী প্রাণীদের জন্য কাঁঠালের পাতা খুব পছন্দনীয়। ছাগলের খাবারের জন্য বেশ
উপযোগী একটি উপাদান হলো কাঁঠাল গাছের পাতা। ছাগল পছন্দের শহীত কাঁঠালের পাতার আগা
থেকে গোড়া পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। কাঁঠাল পাতার মধ্যে কার্বোহাইড্রেট থাকে এছাড়াও
কাঁঠাল পাতার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, থায়ামিন, ফাইবার
এবং জিংক। এসব পুষ্টি উপাদান ছাগল কাঁঠালের পাতা খেলে পেয়ে থাকে।
কাঁঠাল পাতা ছাগল খেলে তার শরীরে অনেক উপকার সাধিত হয়। কাঁঠালের পাতা খেলে
ছাগলের হজম শক্তি বাড়ে, মাংসপেশী মজবুত করে এবং মুখে রুচি বৃদ্ধি পায় ফলে ছাগল
খাওয়ার চাহিদা দেখায়। তবে ছাগল এই খাবার যদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে তবুও ছাগলের
কোন সমস্যা হবে না। কাঁঠালের পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ
একটি ঔষধি পাতা। যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত কাঁঠালের পাতার রস করে খেলে
উপকার পাওয়া যায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও কাঁঠাল পাতার আরো
ঔষধি গুণ রয়েছে, কাঁঠাল পাতার রস করে খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো থাকে।
কাঁঠাল পাতা ব্যথা নিরাময়ের কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যদি আমাদের শরীরে কোথাও
ব্যাথা হয় বা কোথাও কেটে যায় ক্ষত চিহ্ন বের হয় তাহলে কাঁঠালপাতা পিষে সে ক্ষত
জায়গায় লাগিয়ে রাখলে আরাম পাওয়া যায়। আবার এই পাতা চর্ম রোগের চিকিৎসা
হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই কাঁঠালের পাতার ঔষধি গুন সম্পর্কে আমাদের
ধারণা থাকা দরকার। অনেক কৃষক কাঁঠালের পাতা বিক্রি করেও নিজের উপার্জন করে থাকে।
কাঁঠালের পাতা বিক্রি করে অনেকে লাভবান হচ্ছেন বর্তমানে।
কাঁঠালের প্রকারভেদ
কাঁঠালের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে। তবে বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে মোটামুটি দুটি ভাগে
ভাগ করা যায় সেটা হল খাজা ও গালা জাত। এ দুটি জাত বাদে আরও অনেক কাঁঠালের
জাত রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য দেশগুলোতে কাঁঠালের আরো জাত রয়েছে যেমন
সিলন,পদ্মরাজ, হাজারী, গোলাপগন্ধা ইত্যাদি। কাঁঠালের জাত আলাদা হলেও খেতে সবগুলোই
সুমিষ্ট। চলুন কাঠালের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানি-
- গালা জাতঃ এই জাতের কাঁঠালগুলো ভালোভাবে পাকে এবং এটি খেতে কোমল মিষ্টি এবং রসালো প্রকৃতির হয়ে থাকে, আবার কখনো কখনো এটি খেতে টক মিষ্টি হয়ে থাকে। এই গালা জাত কাঁঠালের পোস্টগুলো কোষগুলো অপেক্ষা কৃত ছোট হয়। খোসার গায়ে দিয়ে কাটা থাকে সেটি অনেকটাই চ্যাপ্টা হয় এবং এই কাঁঠাল পাকলে হলুদা ভাব হয়। কোষগুলো সহজে আলাদা করা যায়।
- খাজা জাতঃ এই জাতের কাঁঠালের ও সাধারণত বড় হয়ে থাকে এবং অপেক্ষাকৃত শক্ত ও কচকচে হয়। এই জাতের কাঁঠাল খেতে খুব মজা। এটির রং ফ্যাকাসে হলুদ হয় এবং সাদে মোটামুটি মিষ্টি হয়। পাকার পরও খোসা সবুজ থাকে এই কাঁঠালের। এই কাঁঠালের গায়ের কাটা মোটামুটি এবং বড় প্রকৃতির হয়।
রান্নায় কাঁঠালের ব্যবহার
মূলত রান্নায় কাঁচা কাঁঠালের কদর অপরিসীম। বাংলাদেশের মানুষ কাঁচা কাঁঠাল খেতে
প্রচুর পছন্দ করে। তাই তারা কাঁঠাল দিয়ে বিভিন্ন ভ্যারাইটির তরকারি
রান্না করে। কাঁচা কাঁঠাল কে বাংলাদেশের মানুষ এঁচোড় বলে থাকে। কাটা
কাঁঠালের হালকা স্বাদ এবং মাংসের মতন পিকচার থাকায় অনেকে রান্নায় এটি মাংসর
বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে অনেক ধরনের তরকারি
রান্না করা যায় যেমন কাঁচা কাঁঠালের চপ, তরকারি এবং সিদ্ধ করেও
খাওয়া যায়। এছাড়াও কাছাকাছি দিয়ে চিপস তৈরি করা যায় যা পরবর্তীতে ভেজে
খাওয়া হয়। শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গে কাঁচা কাঁঠালের বিভিন্ন পদ
রান্না করা হয়। তাই প্রতিদিন কাঁচা কাঁঠাল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি শরীরের
পক্ষে অনেক উপকারী।
আরো পড়ুনঃ
উপসংহার
উপরিউক্ত আলোচনায় কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা আশা করি
আপনাদের দিতে পেরেছি। কাঁঠালের খারাপ দিকের চেয়ে ভালো দিকটাই অনেক বেশি। তাই
আমি একজন লেখক হিসেবে পরামর্শ দিব, সুস্থ থাকার জন্য হলেও খাদ্য তালিকায় এই
গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে কাঁঠাল রাখুন। কাঁঠাল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
এমনকি কাঁঠালের পাতা, কাঁঠালের গাছ আমাদের অনেক উপকারে আসে। আমি আশা করি উপরে
আর্টিকেলটি করলে আপনি অনেকটাই উপকৃত হবেন।
ডেইলি লাইফস্টাইল অ্যান্ড হেলথ্ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url